নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) পেতে কত সময় লাগে

বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র বিহীন কোন সেবা পাওয়াই সম্ভব না। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নাই তাদের জরুরী প্রয়োজন হলেও তা পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে প্রয়োজনীয় ধাপ সম্পন্নের। নিবন্ধন তথ্য ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করার পর নিবন্ধন সম্পন্ন  হয়। নিবন্ধন সম্পন্নের পর তা যাচাই-বাছাই, প্রুফ রিডিং এবং প্রয়োজনে তদন্ত সম্পন্ন করে নিবন্ধনের ডাটা এনআইডি সার্ভারে আপলোড করার পর তা বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়।

বায়োমেট্রিক ম্যাচিং এর জন্য প্রতিক্ষণ প্রচুর ডাটা কিউতে জমা হয়। কিউতে যতবেশি ডাটা জমা হয় বায়োমেট্রিক ম্যাচিং রিপোর্ট জেনারেট হতে তত বেশী সময় প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিটি আঙ্গুলের ছাপ ডাটাবেজে বিদ্যমান সকল নাগরিকের (মৃত এবং অন্য কোন কারণে অন্য স্টাটাসে থাকলেও) বিদ্যমান প্রতিটি আঙ্গুলের সাথে চেক করে, এতে তাঁর প্রদত্ত ১০ টি আঙ্গুলের প্রতিটির সাথে যদি বিদ্যমান ১২.৫ কোটি নাগরিক তাদের ১০টি করে আঙ্গুল ১২.৫ কোটি *১০=৫০০ কোটি আঙ্গুলের সাথে তার প্রতিটি আঙ্গুল কে চেক করে রিপোর্ট প্রদান করে। এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় এবং এটি একটি অটোমেটেড প্রক্রিয়া যেখানে কারো হাত থাকে না। এবং বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে একটি ক্ষুদেবার্তা চলে যায় নিবন্ধনকারীর মোবাইল নম্বরে। উক্ত ক্ষুদে বার্তায় জানিয়ে দেয়া হয় এনআইডি নম্বর এবং এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করার বিষয়ে। স্বাভাবিক সময়ে ৪-৫ হাজার ডাটা আপলোড হলে তখন ২/৩ দিন বা ১ সপ্তাহ সময় লাগলেও যখন দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান থাকে তখন প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে ডাটা জমা হয়। হালনাগাদকালে এমনও হয় একদিনে ১-২ লক্ষ ডাটাও আপলোড হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়, এক্ষেত্রে ১-২ মাস সময় লেগে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তখন চাইলেই সম্ভব নয় তাৎক্ষনিক এনআইডি কার্ড প্রাপ্তুি। এজন্য নিবন্ধনযোগ্য হলেই নিবন্ধন নিয়ে হেলা করা মোটেও সমীচিন না। কারণ হেলা-ফেলা করে সময় পার করে জরুরী প্রয়োজনের সময় বিপদে আপনাকেই পড়তে হবে। তখন অন্য কারো সাধ্য থাকবেনা আপনাকে বিপদ হতে উদ্ধার করার।

ধাপ-১

কাগজপত্র সংগ্রহ:

এনআইডি নিবন্ধনের জন্য আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে বেশ কিছু কাগজপত্র। এর মধ্যে-

১. জন্ম নিবন্ধন (অনলাইনে যাচাইযোগ্য) সনদপত্র;

২. নাগরিক সনদ (বাংলাদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌর কাউন্সিলর/সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত এবং দ্বৈত নাগরিকদের জন্য প্রয়োজন হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে প্রদত্ত দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ;

৩. ঠিকানা ও বাসিন্দা প্রমানের জন্য প্রয়োজন হবে হোল্ডিং ট্যাক্স ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ, ইউটিলিটি বিলের কপি এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌর কাউন্সিলর/সিটি কর্পো: কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র;

৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা পিএসসি বা তদুর্দ্ধ হলে প্রদান করতে হবে তার সনদপত্র;

৫. বাবা-মা, স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি এবং পাসপোর্ট, টিআইএন, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (যদি থাকে);

ধাপ-২

ফরম পূরণ:

এনআইডি পেতে কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর করতে হবে নিবন্ধণ ফরম পূরণ।

দুইভাবে করা যায় নিবন্ধন ফরম পূরণ।

ক) অফলাইন পদ্ধতিতে অফিস হতে প্রদত্ত ফরম হাতে লিখে পূরণের মাধ্যমে;

এবং

খ) অনলাইন পদ্ধতিতে এনআইডি পোর্টালে নিবন্ধন ফরমের তথ্য প্রদান করে সাবমিট করার মাধ্যমে;

অতপর পূরণকৃত নিবন্ধন ফরমের কপিটিতে শনাক্তকারী হিসেবে এনআইডি নম্বরসহ স্বাক্ষর করাতে হবে পরিবার বা তাকে চিনে এমন কোন ব্যক্তির। আর যাচাইকারী হিসেবে এনআইডি নম্বরসহ সীলসহ স্বাক্ষর করাতে হবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌর কাউন্সিলর/সিটি কর্পো: কাউন্সিলর এর।

ধাপ-৩

বায়োমেট্রিক প্রদান:

নিবন্ধন ফরম ও বর্ণিত কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে বায়োমেট্রিক (দশ আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ, ছবি ও স্বাক্ষর) ডাটা;

বায়োমেট্রিক প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্নের পর অফিস হতে সীল/স্বাক্ষরকৃত একটি নিবন্ধন স্লিপ (ফরম-৫) প্রদান করা হবে যেটি নিবন্ধন ফরমেরই একটি অংশ এবং তাতে একটি ফরম নম্বর মূদ্রিত থাকবে।

সর্বশেষ ধাপ:

নিবন্ধন ফরম পুরণ করে বর্ণিত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে জমা দিয়ে বায়োমেট্রিক (দশ আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশ, ছবি ও স্বাক্ষর) ডাটা প্রদান করার পর সংশ্লিষ্ট অফিস এর প্রুফ রিডার (অপারেটর) কর্তৃক  এন্ট্রিকৃত ডাটাটি প্রুফ রিড সম্পন্ন করতে হয়। এরপর উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা কর্তৃক আপনার ডাটাটি লোকাল সার্ভার হতে সেন্ট্রাল সার্ভারে আপলোড করার একটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে যা উক্ত অফিসের উপর নির্ভর করবে। ডাটা আপলোডের কাজটি সম্পন্ন হলে সেন্ট্রাল সার্ভার হতে আপনার ডাটাটির বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন করবে। বায়েমেট্রিক ম্যাচিংএ আপনার ডাটাটি ইউনিক পাওয়া গেলে অর্থাৎ পূর্বে নিবন্ধন না হয়ে থাকলে আনুমানিক এক সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে স্বাগত জানিয়ে আপনার মোবাইলে (রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রদানকৃত) একটি মেসেজ আসবে যেখানে আপনার এনআইডি নম্বরটি উল্লেখ থাকবে। এরপর আপনি  উক্ত এনআইডি নম্বর দিয়ে এনআইডি অনলাইন পোর্টাল হতে আপনার এনআইডি কার্ডের একটি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট ও লেমিনেটিং করে ব্যবহার করতে পারবেন।

এই আর্টিকেলের সচরাচর জিজ্ঞাসাসমূহ:

প্রশ্ন: কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়?

উত্তর: নিবন্ধন তথ্য ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করার পর নিবন্ধন সম্পন্ন  হয়। নিবন্ধন সম্পন্নের পর তা যাচাই-বাছাই, প্রুফ রিডিং এবং প্রয়োজনে তদন্ত সম্পন্ন করে নিবন্ধনের ডাটা এনআইডি সার্ভারে আপলোড করার পর তা বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: কোথা হতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়?

উত্তর: উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে  নিবন্ধন সম্পন্নের পর জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কি কোন ফরম পূরণ করতে হয়?

উত্তর: জি।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ফরম কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর: এনআইডি অনলাইন পোর্টালে ফরম পূরণ করা যায়।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কি কোন নিবন্ধন করতে হয়?

উত্তর: জি।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কিভাবে নিবন্ধন করতে হয়?

উত্তর: এনআইডি অনলাইন পোর্টালে ফরম পূরণ করে তা প্রিন্ট করে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয়।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কোথায় নিবন্ধন করতে হয়?

উত্তর: উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয়।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করতে কোন কাগজ-পত্র প্রয়োজন হয়?

উত্তর: জি, জন্ম সনদ, নাগরিক সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি থাকে), আবাসস্থলের প্রমানপত্রসহ বেশ কিছু কাগজ-পত্র প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ-পত্র প্রয়োজন হয়?

উত্তর:

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন–

ক) জন্ম তারিখ প্রমানে জন্ম সনদ

খ) এসএসসি সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে),

গ) পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/টি.আই.এন সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে),

ঘ) বাংলাদেশের নাগরিক প্রমানে নাগরিক সনদপত্র (স্থানীয় সরকার, যেমন–ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র/কাউন্সিলর/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র/কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত),

ঙ) প্রত্যয়নপত্র (স্থানীয় সরকার, যেমন–ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র/কাউন্সিলর/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র/কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত),

চ) ঠিকানা প্রমানে হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ/বাড়ী ভাড়ার রশিদ, বাসার কোন ইউনিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ/টেলিফোন/গ্যাস ইত্যাদি),

ছ) বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সাথে নিয়ে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে।

প্রশ্ন: নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) পেতে কত সময় প্রয়োজন?

উত্তর: সাধারণত নিবন্ধন সম্পন্ন হওযার পর  ১ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

প্রশ্ন: নিবন্ধন করার পরেও জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে?

উত্তর: ডুপ্লিকেট শনাক্ত হলে বা বায়োমেট্রিক তথ্যে সমস্যা থাকলে নিবন্ধন করার পরেও জাতীয় পরিচয়পত্র না আসতে পারে।

প্রশ্ন: নিবন্ধন করার পরেও জাতীয় পরিচয়পত্র না পেলে কি করতে হবে?

উত্তর: এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিসে সরাসরি গিয়ে কথা বলে জানতে হবে।