বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিচয়পত্র একটি অত্যাবশ্যকীয় ডকুমেন্ট যা বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। এই ডকুমেন্টটি না থাকলে পারলে অনেক সেবা গ্রহনই সম্ভব হয় না। শুধু নতুন কার্ড প্রাপ্তি বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা তথ্য-উপাত্ত সংশোধন বা হারানো/ডুপ্লিকেট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি সংক্রান্ত কাজেই নয়, এনআইডি/ভোটার নিবন্ধন করেছেন এমন সকল বাংলাদেশী নাগরিকদেরই প্রয়োজন এনআইডি অনলাইন সার্ভিস পোর্টালের একাউন্ট বা ইউজার আইডি। কারণ এনআইডি কার্ড রয়েছে বা এনআইডি’র জন্য নিবন্ধন করেছেন তারা অনেকেই দেখেনি এনআইডি তথ্য ভান্ডারে তার তথ্যাবলী কিভাবে রয়েছে? তা পুরোপুরি নির্ভুল বা আপডেটেড আছে কিনা? তা জানা জরুরী। আর যদি কোন ভুল থেকে থাকে এবং আপনি খেয়াল না করেন এবং হঠাৎ করে প্রয়োজনের সময় সেটা সংশোধন বা আপডেট করার প্রয়োজন হয় তবে তা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাড়াতে পারে। যদি সময় নিয়ে তা সংশোধন বা আপডেট করার প্রক্রিয়া না করেন।
বাস্তবতা
ভোটার বা পরিচয় নিবন্ধনের সময় তথ্য সংগ্রহকারী আপনার তথ্য যেভাবে লিপিবদ্ধ করেছে ডাটা এন্ট্রি করেছে ভিন্ন ব্যক্তি তাই ফরমে প্রদত্ত তথ্য শতভাগ সঠিকভাবে এন্ট্রি করা হয়েছে বা কোন তথ্য ভুল হয়নি এমন নিশ্চয়তা নাই। তাই এনআইডি সিস্টেমে তথ্য কিভাবে রয়েছে এবং বিদ্যমান তথ্য-উপাত্তে কোন আপডেট করতে হবে কিনা তা দেখতে সকল নিবন্ধিত নাগরিকগনেরই উচিত এনআইডি পোর্টালে নিবন্ধন করে তার তথ্যাদি দেখে নেয়া। এছাড়া অনেক বছর আগে প্রদত্ত তথ্য আজকের সময়ানুযায়ী প্রয়োজন হতে পারে আপডেট করার। অনেকেই যখন নিবন্ধন করেছেন তখন পেশায় হয়তো ছিলেন ছাত্র কিন্তু আজ হয়তো আপনি অন্য কোন পেশাজীবী। আবার আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা হয়তো ছিল এইচএসসি কিন্তু আজ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। কিন্তু আপনি শিক্ষাগত যোগ্যতার আপডেট না চাওয়ায় আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়ে গেছে আগেরটাই। এছাড়া অনেক সময় তথ্য সংগ্রহকারী ফরম পূরণের সময়ই ভুল করে থাকতে পারে যা আপনি হয়তো যাচাই না করেই স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন। এছাড়া আপনার সেই সময়ের ছবির সাথে বর্তমান আপনার ছবির কোন মিলই নাই বা আগে যেভাবে স্বাক্ষর করেছিলেন এখন পেশাগত জীবনে আপনার স্বাক্ষর চেঞ্জ করেছেন কিন্তু আপনার কার্ডের সাথে তা আমূল পরিবর্তন হয়ে আছে যা কখনও আপনি এভাবে ভেবেই দেখেননি। এছাড়া অনেকেরই ঠিকানা রয়েছে পুরানো। তাই এখন সময় আপনার তথ্য যাচাই করে তা নির্ভুল এবং হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করা।
এছাড়া এনআইডি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তির জন্য এনআইডি পোর্টালে নিবন্ধন করে NID সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ এবং বিভিন্ন আবেদন ট্র্যাক করতে পারবেন যদি আপনার থাকে এনআইডি পোর্টালে একটি একাউন্ট বা এনআইডি পোর্টালের ইউজার আইডি। জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য ভান্ডার হতে নিজের সমূদয় তথ্যাবলী দেখা, কার্ড হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে তা পুনরায় উত্তোলন এসবের জন্য আর দারস্থ হতে হয়না নির্বাচন অফিসের। এনআইডি কার্ড বা ডাটাবেজের তথ্যে কোন তথ্য আপডেট বা ভুল সংশোধন, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, বৈবাহিক অবস্থার পরিবর্তন সবই এখন অনলাইনে যদি আপনার তাকে এনআইডি সিস্টেমে এক্সেস।
কেন এনআইডি পোর্টালের ইউজার একাউন্ট?
এনআইডি পোর্টালে একাউন্ট থাকলে এই ইউজার আইডি দিয়ে লগইন করে আপনার ডাটাবেইজের সম্পুর্ন প্রোফাইল দেখতে পারবেন। এতে কোন ভুল থাকলে জানবেন। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন/ডুপ্লিকেট কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা নতুন নিবন্ধনের জন্য এনআইডি অন-লাইন সিস্টেম হতেই আবেদন করতে পারবেন, যারা ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন কিন্ত জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি বা এনআইডি কার্ড পাননি, তারা এনআইডি অনলাইন সার্ভিসের জন্য এনআইডি পোর্টালে রেজিস্টার ও লগইন করে ডাউনলোড অপশন হতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন বিনামূল্যে।
এছাড়া পূর্বে যাদের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংশোধনের আবেদন জমা দেয়া আছে, আবেদনের হাল অবস্থা জানতে পারবেন এই ইউজার একাউন্টের মাধ্যমে। এমনকি যারা কখনও এনআইডি সংক্রান্ত কোন সার্ভিসের জন্য ইতোপূর্বে আবেদন করেননি তাদের ডাটাবেজের তথ্য কিভাবে আছে তা দেখে নিতে পারেন এনআইডি অনলাইন সার্ভিসে রেজিস্টার করে। এছাড়া কোন তথ্য আপডেট করতে হলে তাও এখন সম্ভব ঘরে বসে অনলাইন এনআইডি সার্ভিসের মাধ্যমে যদি থাকে এনআইডি সার্ভিস পোর্টালের ইউজার আইডি।
সহজেই সম্পন্ন কা যায় এনআইডি পোর্টালের ইউজার আইডি বা একাউন্ট
কয়েকটি সহজ ধাপে নিজেই তৈরী করে নেয়া যায় এনআইডি পোর্টালের ইউজার একাউন্ট। এনআইডি অনলাইন সিস্টেমে রেজিস্ট্রার করতে https://services.nidw.gov.bd/ লিংকে গিয়ে কয়েকটি সহজ ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ এবং ছবিতে প্রদর্শিত কোডটি নির্দেশিত বক্সে লিখে “সাবমিট” বাটন ক্লিক করতে হবে। অতপর আরেকটি পেজ আসবে যেখানে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার বিভাগ, জেলা এবং উপজেলার নাম সঠিকভাবে (যেটি ডাটা বেইজে বিদ্যমান) সিলেক্ট করে দিয়ে “পরবর্তী” বাটন চাপ দিলে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP বা কোড পাঠাতে “বার্তা পাঠান” অপশন দিবে আর যদি মোবাইল নম্বরটি পরিবর্তন করতে চান তবে সেটির জন্য “মোবাইল পরিবর্তন” বাটনে চাপ দিলে নতুন মোবাইল নম্বর প্রদানের অপশন দিবে। “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করলে মোবাইলে একটি কোড যাবে যা প্রদান করে বহাল নামের বাটনে চাপ দিতে হবে। এই ধাপটি শেষ হলে একটি কিউআর কোড আসবে এবং তা স্ক্যান করার জন্য “এনআইডি ওয়ালেট” নামে একটি এ্যাপস মোবাইলে ডাউনলোড করে নিয়ে তা দ্বারা কোডটি স্ক্যান করতে হবে। এরপর এনআইডি ওয়ালেট এ্যাপস হতে আবেদনকারী ব্যক্তির মুখের দিকে ধরে বাম-ডান দিকে ঘোরাতে হবে। সফলভাবে ফেস স্ক্যান হলে একাউন্ট রেজিস্ট্রার সম্পন্ন হবে এবং এনআইডি পোর্টাল একাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড সেট করার অপশন আসবে। পাসওয়ার্ড সেট করলে পরবর্তী লগইন এ এত ধাপ পেরোতে হবে না শুধু ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড এবং ফেস রিকগনিশন করলেই হবে অন্যথায় পুরো প্রক্রিয়াটি প্রতিবার নতুনভাবে করতে হবে। পাসওয়ার্ড সেট করলে বা না করে তা এড়িয়ে গেলে “এড়িয়ে যান” বাটনটি ক্লিক করলে প্রোফাইল চলে আসবে। প্রথমে লগইন আবস্থায় “হোম” মেন্যু থাকবে যেখানে “প্রোফাইল”, “রি-ইস্যু”, “পাসওয়ার্ড পরিবর্তন”, “স্মার্ট এনআইডি কার্ড স্ট্যাটাস” ও “ডাউনলোড” অপশন থাকবে। এছাড়া নিবন্ধনকারীর ছবিসহ তার নাম, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা, ভোটার এলাকার তথ্য এর নিচে “বিস্তারিত প্রোফাইল” নামে আরেকটি বাটন থাকবে যেখানে ক্লিক করে বিস্তারিত প্রোফাইল দেখা যাবে।
কি করা যাবে এনআইডি পোর্টালে
প্রোফাইলঃ (প্রোফাইল দেখুন/পরিবর্তন করুন) অপশন হতে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখা বা এডিট করে চাহিত সংশোধনীর সাথে রিলেটেড ডকুমেন্টস সমূহ স্ক্যান/ছবি তুলে সংযুক্ত করে সংশোধনের আবেদন করা যাবে। সংশোধনের আবেদন সাবমিট বা জমা করার জন্য আবেদনের প্রয়োজনীয় ফি এর পরিমান দেভাবে বা https://services.nidw.gov.bd/fees লিংক হতে ফি এর পরিমাণ জেনে আবেদন সাবমিট করার প্রাক্কালে নির্ধারিত ফি অনলাইন/মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ করার পূর্বে আবেদন সাবমিট করলে আবেদনটি ড্রাফট অবস্থায় থেকে যাবে। এজন্য সাবমিটের পূর্বে অবশ্যই ফি জমা দিয়ে অতপর আবেদন সাবমিট করতে হবে। আবেদন সাবমিট করার পর এর একটি জেনারেটেড ফরমের কপিও ডাউনলোড করে নেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে অনলাইনে আবেদন করতে অসমর্থ হলে নিজ নিজ ভোটার এলাকা অর্থাৎ যেখানে ভোটার সেখানকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে প্রযোজ্য সরকারী ফি জমা দিয়ে সংশোধনের প্রমানপত্র হিসেবে উপযুক্ত ডকুমেন্টসহ (যেমন: এসএসসি/সমমানের সনদ বা অন্য ডকুমেন্ট যা সংশোধনের সাথে প্রযোজ্য) জমা দিতে হয়। আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি এসএসসি বা তার উপর হয় এবং সংশোধনের বিষয় যদি হয় সেই সম্পর্কিত তাহলে অবশ্যই এসএসসি সনদ প্রয়োজন হয়। তবে কোন আবেদনকারী যদি এসএসসি পাশ না হয় তাহলে জন্ম সনদ, পাসপোর্ট বা অন্য কোন উপযুক্ত ডকুমেন্টসহ আবেদন জমা দেয়া যায়। তবে যে কারণে সংশোধন চাওয়া হচ্ছে তার উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে অবশ্যই। সংশোধনের যৌক্তিকতা প্রমান না করতে পারলে সারবত্তাহীন আবেদন গ্রহনযোগ্য মর্মে বিবেচিত হয় না এনআইডি কর্তৃপক্ষের নিকট। এজন্য এমন সব আবেদন বাতিল বা নামঞ্জুর হয়ে থাকে কর্তৃপক্ষের নিকট।
রি-ইস্যুঃ এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে, চুরি হয়ে গেলে, পুড়ে গেলে, কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, নষ্ট বা বিনষ্ট হয়ে গেলে অথবা ভোটার এলাকা স্থানান্তর/মাইগ্রেশন জনিত কারণে কার্ড পুনরায় ইস্যু বা রি-ইস্যু বা কার্ডের ডুপ্লিকেট কপির প্রয়োজন হলে এই অপশন হতে কার্ড পুনরায় পাওয়ার আবেদন জমা দেয়া বা সাবমিট করা যাবে। আবেদন সাবমিট করার আগে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। আবেদনটি সাবমিট হলে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি ক্ষুদে বার্তা পাওয়া যাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক আবেদনটি মঞ্জুর হলে আরেকটি ক্ষুদে বার্তা পাওয়া যাবে এবং রি-ইসূকৃত কার্ডটি অত্র পোর্টালের ডাউনলোড অপশন হতে ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
পাসওয়ার্ড পরিবর্তনঃ আপনার এনআইডি পোর্টালের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে চাইলে করতে পারবেন এই অপশন থেকে।
স্মার্ট এনআইডি কার্ড স্ট্যাটাসঃ আপনার স্মার্ট কার্ডটি মূদ্রণ হয়েছে কিনা, আর হয়ে থাকলে কোথায় আছে এবং না হয়ে থাকলে কোন সমস্যার কারণে আটকে আছে কিনা তা জানতে পারবেন এই অপশন হতে।
ডাউনলোডঃ নিবন্ধনের পর নতুন কার্ড বা এনআইডি কার্ডের তথ্য বা ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্য উপাও আপডেট বা পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়া কার্ড পুনরায় ইস্যু বা রি-ইস্যু হলে তা এই ডাউনলোড অপশন হতে ডাউনলোড করে নেয়া যাবে। যা ডাউনলোড করে একটি রঙিন প্রিন্ট নিয়ে দুইদিকে ভাজ দিয়ে লেমিনেট করে নিলে এটিই হয়ে যাবে অরিজিনাল ন্যাশনাল আইডি কার্ড। এর জন্য আর নির্বাচন অফিসে যাওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না।
সবশেষে
একাউন্ট খোলার পর এর সর্বশেষ ধাপ ফেস রিকগনিশন এর মাধ্যমে আইডি ভেরিফিকেশন। এনআইডিধারী ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করে যাতে অন্য কেউ তার তথ্য দেখতে না পারে এবং তার অজান্তে অন্য কেউ যাতে তার একাউন্টে প্রবেশ করে কোন আবেদন সাবমিট করতে না পারে এজন্য রয়েছে এই ধাপটি। এই ধাপটি সম্পন্ন করতে আপনাকে গুগল প্লে হতে এনআইডি ওয়ালেট নামক মোবাইল এ্যাপস ডাউনলোড করে ফেস ফেরিফিকেশনের মাধ্যমে আপনার আইডি ফেরিফিকেশন করে নিতে হবে। আপনার এনআইডি সার্ভিসেস পোর্টালে প্রবেশ করে সেবা নিতে আপনাকে এনআইডি ওয়ালেট এ্যাপস ওপেন করে এনআইডি পোর্টেলের কিউআরকোড টি রিড করাতে হবে। এনআইডি ওয়ালেট এর ব্যবহারের একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে যা দেখে নিতে পারেন।
Comments are closed.