বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জাতীয় পরিচয়পত্র যা ছাড়া কোন করাই এখন অসম্ভব একথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেক সময় হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই এনআইডি কার্ড। তবে সতর্ক/সচেতন থাকার পরেও এটি হারাতে বা নষ্ট হতে পারে না এটা বলার উপায় নেই। অনিবার্য কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে এখন অনেক সহজ পদ্ধতিতে এর ডুপ্লিকেট কপি সংগ্রহ করা সম্ভব।
পদ্ধতি
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে প্রথমে পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করতে হবে। পরিচয়পত্র বা এনআইডি নম্বর জানা না থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকা হতে ১২ সংখ্যার ভোটার নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণ ডায়েরী বা জিডির মূল কপি সংযুক্ত করে অনলাইন সিস্টেমে এনআইডি কার্ড রি-ইস্যুর আবেদন করতে https://services.nidw.gov.bd/ সাইটে রেজিস্ট্রার করতে হবে। রেজিস্ট্রার অপশনে গিয়ে এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রথমে রেজিস্ট্রার করতে হবে। অতপর লগইন অপশনে গিয়ে এনআইডি নম্বরকে ইউজার আইডি হিসেবে এবং রেজিস্ট্রার করার সময় প্রদত্ত জেনারেটেড পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। লগইন করে কার্ড রি-ইস্যু অপশনে গিয়ে রিইস্যুর কারন সিলেক্ট করে ডকুমেন্ট হিসেবে রি-ইস্যুর ধরন লস্ট হলে জিডি কপি আর ড্যামেজ/মাইগ্রেট হলে বিদ্যমান কার্ডের ছবি তুলে/স্ক্যান করে সংযুক্ত করতে হবে।
তবে কার্ড না হারালে নষ্ট বা স্থানান্তর জনিত কারণে নতুন ঠিকানার জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে রি-ইস্যুর ধরনে লস্ট সিলেক্ট করার প্রয়োজন নাই। এক্ষেত্রে পুরাতন/নষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিটির একটি ছবি বা কপি আপলোড করে দিলেই চলবে। তবে লস্ট উল্লেখ করলে প্রয়োজন হবে থানায় কার্ড হারানোর জিডি করে তার কপি সংযুক্ত করার।
আগে থেকে কার্ড হারানো/রি-ইস্যুর ফি জমা না দেয়া থাকলে https://services.nidw.gov.bd/fees লিংক হতে ফি এর পরিমাণ জেনে অথবা আবেদন সাবমিট করার প্রাক্কালে প্রদর্শিত ফি এর সমপরিমান ফি নির্ধারিত ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ করার পূর্বে আবেদন সাবমিট করলে আবেদনটি ড্রাফট অবস্থায় থেকে যাবে। এজন্য সাবমিটের পূর্বে অবশ্যই ফি জমা দিয়ে অতপর আবেদন সাবমিট করতে হবে। আবেদন সাবমিট করার পর এর একটি জেনারেটেড ফরমের কপিও ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
তবে অনলাইনে আবেদন করতে অসমর্থ হলে নিজ নিজ ভোটার এলাকা অর্থাৎ যেখানে ভোটার সেখানকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে প্রযোজ্য সরকারী ফি জমা দিয়ে সংশোধনের প্রমানপত্র হিসেবে উপযুক্ত ডকুমেন্টসহ জমা দিতে পারেন।
হারানো/নষ্ট কার্ড পুন:প্রাপ্তির আবেদন এর ক্যাটাগরী:
সাধারণ অথবা জরুরী দুই ক্যাটাগরীতে জমা দেয়া যায় হারানো NID কার্ড প্রাপ্তির আবেদন।
সাধারণ ক্যাটাগরীর আবেদন:
সাধারণ ক্যাটাগরীতে জমাকৃত আবেদন এর কার্ড পাওয়া যাবে ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে। এক্ষেত্রে ফি জমা দিতে হবে। ১ম বার হারানো কার্ড ইস্যুর জন্য আবেদনের ফি ২০০+১৫% ভ্যাট=২৩০ টাকা (পূর্বে কখনও হারানো/নষ্ট কার্ড উত্তোলন না করা হয়ে থাকলে)। আগে একবার হারানো/নষ্ট কার্ড উত্তোলন করে থাকলে অর্থাৎ যদি ২য় বার কার্ড পুন:ইস্যুর আবেদন হয়, তাহলে আবেদন ফি জমা দিতে হবে ৩০০+১৫% ভ্যাট=৩৪৫ টাকা। আর যদি পূর্বে ২ বার হারানো বা নষ্ট এনআইডি কার্ড উঠানো হয়ে থাকে অর্থাৎ ৩য় বার হারানো/নষ্ট কার্ড উঠানোর প্রয়োজন হয় তাহলে ফি জমা দিতে হবে ৫০০+ ১৫% ভ্যাট=৫৭৫ টাকা। তবে ৩য় বা তদুর্দ্ধবার হারানো/নষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সাধারণ ক্যাটাগরীর আবেদন জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে।
জরুরী ক্যাটাগরীর আবেদন:
জরুরী ক্যাটাগরীর আবেদন ফি ১ম আবেদনের জন্য ৩০০+১৫% ভ্যাট=৩৪৫ টাকা, ২য় বার আবেদন হলে ৫০০+১৫% ভ্যাট = ৫৭৫ টাকা, ৩য় বার হারানো বা নষ্ট এনআইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন হলে ফি জমা দিতে হবে ১০০০+১৫% ভ্যাট =১১৫০ টাকা। ৩য় বা তদুর্দ্ধ বার হারানো/বিনষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পুন:মূদ্রণ চাইলে একই ফি জমা দিতে হবে। জরুরী হারানো/নষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিস হতে এটি সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে জরুরী পুন:মূদ্রিত কার্ড পাওয়ার বিষয়টি বললে পেতে পারেন অল্প সময়ের মধ্যেই। তবে অনলাইন আবেদনকারীদের জন্য কার্ড মূদ্রণের জন্য নির্বাচন অফিসে না গেলেও চলবে। কার্ডের আবেদন অনুমোদিত হওয়ার পরেই আপনার প্রদত্ত মোবাইলে এ সংক্রান্ত একটি এসএমএস আসবে। এরপরপরই এনআইডি অনলাইন পোর্টালের একাউন্ট-এ লগইন করলে কার্ড ডাউনলোড অপশন হতে কার্ডের পিডিএফ কপি ডাউনলোড করা যাবে। এই কপিটি সেভ করে কোন কালার প্রিন্টার হতে প্রিন্ট করে দুপাশ ভাজ করে লেমিনেট করে নিলেই তৈরী হয়ে যাবে মূল জাতীয় পরিচয়পত্র।
ফি জমা
ফি জমার সময় ১০/১৭ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করতে হবে। DBBL এর রকেট, ট্রাস্ট ব্যাংক এর টি-ক্যাশ, ওয়ান ব্যাংক এর ওকে ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং/এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বিকাশ এর বিল পে অপশন এর All Organization এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের লোগো প্রদর্শিত NID Service অপশন হতে মাধ্যমে অনলাইনে জমা দেয়া যায়। এছাড়া চালান/ই-চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া যায়। তবে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ফি প্রদান করাই ভালো। কারণ এতে ফি সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআইডি সিস্টেমে সিন্ক্রোনাইজ হয়ে যায়।
Comments are closed.