ভুটান সম্পর্কীয় সাধারণ তথ্য
একদিকে বিশাল চায়না আরেকদিকে জায়ান্ট ভারত। মাঝখানে এক শান্তির নিবাস ভুটান। দ্রুত কিছু মানুষের মিলিওনিয়ার হওয়ার রেকর্ড যেমন ভুটানে নেই। ঠিক তেমনি ভুটানে একজন হোমল্যাস মানুষও নেই। স্বাস্থ্য চেকআপে ভুটানে কেউ যেমন, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, ইউরোপ-আমেরিকা ছুটোছুটি করে না; ঠিক তেমনি ভুটানে হেলথকেয়ার সম্পূর্নরুপে ফ্রি। ভুটানের হেল্থ মিনিস্ট্রির মূল লক্ষ হলো ” এ নেশন উইথ দ্য বেস্ট হেলথ’।
ভুটানী আর আমাদের চিন্তাধারার মৌলিক তফাৎ
২০১০ সাল থেকে ভুটানে যে কোনো রকম তামাক, ড্রাগ জাতীয় দ্রব্যের উৎপাদন, বন্টন , বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ভুটান হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ধূমপানমুক্ত দেশ। আমাদের গলিতে-গলিতে, মোড়ে মোড়ে গাঁজা, ফেনিসিডিল, ইয়াবা, সিগারেটের ছড়াছড়ি। ভুটানের টার্গেট হলো, দেশের মূল সম্পদ যুব সম্প্রদায়কে বাঁচাতে হবে। ডাক্তার, হাসপাতাল, ক্লিনিকে ছুটোছুটি করার আগে রোগ প্রতিরোধের কার্যকরী উপায় বের করতে হবে। রোগের সাম্রাজ্যে বাস করে শুধু ল্যাব, ক্লিনিক, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করলে কিছুই হবে না। শারীরিকভাবে অসুস্থ জাতি সামনে আগাতে পারে না। আমাদের দেশে ডাক্তাররা বেশি বেশি অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয় কমিশন পাবে বলে, রোগীর কথা শুনার আগেই পেসক্রিপশন লেখা শুরু করে, সময় নিয়ে সমস্যা শুনে না, ভালো করে কথা বলে না, রোগিকে ভয় দেখিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে। সরকারী হাসপাতালে বেড খালি খাকলেও বলে সিট নেই, নার্সরা সেবা না করে অবহেলা করে। বেসরকারী হাসপাতালগুলো অকারণে বেশি দিন আটকে রেখে বিল বাড়ানোর জন্য। এজন্য বাংলাদেশের যাদের সুযোগ এবং টাকা আছে তারা চিকিৎসা নিজে চলে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
ভুটানের মনোহর দিক
ভুটানের সবচেয়ে মনোহর দিকটি হলো তাদের ইকোলজি সিস্টেম। আমরা যেমন একদিকে খেলবে টাইগার-জিতবে টাইগার বলে বলে কে কার চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক তার প্রতিযোগিতা করেছি। কিন্তু মরবে সুন্দরবন-মরবে টাইগার বুঝতেই পারছি না। কারণ-আমরা ডাইরেক্ট এ্যাকশান আর নগদে বিশ্বাসী। গাছ কাটো, খাল-নদি ভরাট করে শুধু নিজের মুনাফাটাই বাড়াও, এটাই আমাদের মূলমন্ত্র। কিন্তু ভুটান সম্পূর্ণ রুপে উল্টো। তাদের লক্ষ হলো, ব্যক্তিক মুনাফা না, সামগ্রিক মুনাফা। ইকোলজি সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেলে উঁচু ভবন নির্মাণ, পারমানিবক প্রকল্প ইত্যাদিতে দেশ রক্ষা পাবে না। ভুটানের আইন অনুয়ায়ী দেশের ৬০% বনভূমি থাকতে হবে। কিন্তু এই বনভূমি ওদের রয়েছে ৭১%। যেখানে আমাদের মাত্র ৮%। এর পরেও ২০১৫ সালে মাত্র ১ ঘন্টায় ভুটানে ৫০ হাজার নতুন গাছের চারা রোপণ করা হয়। ফলে ভুটান দুনিয়াতে এক অবাক কাণ্ড ঘটিয়েছে। ভুটানই পৃথিবীর একমাত্র ‘কার্বন নেগেটিভ’ দেশ। যার অর্থ হলো, এখানে যত কার্বন প্রডিউস হয় তার চেয়ে বেশি কার্বন প্রকৃতি এ্যবজর্ভড করে। আহা! পুরো ভুটানই আক্ষরিক অর্থে এক বিশুদ্ধ বাতাসের কলোনি।
বাংলাদেশ এর অবস্থা
আর ঢাকার বাতাসে ২৪ ঘণ্টায় ১০০ কেজি সিসা, তিন হাজার ৫০০ কেজি এসপিএম, এক হাজার ৫০০ কেজি সালফার-ডাই অক্সাইড, ১৪ টন হাইড্রোজেন কোরাইড ও ৬০ টন কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস মিশে। এই দেশের মানুষগুলো বেঁচে আছে কেমন করে??? আল্লাহর অশেষ কৃপায়।
অরগানিক খাবার গ্রহনে ভুটানের অবস্থান
শুধু যে বিশুদ্ধ বাতাসের কলোনি তাই না ভুটানের কেউই নিজের খাবারে নিজে বিষ মিশানোর চিন্তাও করতে পারেনা। ঐ যে আগেই বলেছিলাম, সবার আগে স্বাস্থ্য। পুরো ভুটান শতভাগ অর্গানিক। যে কোনো ধরনের কেমিক্যাল প্রডাক্টের আমদানী এবং ব্যবহার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। সবকিছুই একেবারে ন্যাচারালি কাল্টিভেটেড।
ভুটানের আলটিমেট দর্শন ” হ্যাপিনেস”
ভুটানের আরেকটি অবাক করা সুন্দর দিক হলো-পৃথিবীতে একমাত্র ওদের রয়েছে-“দ্য মিনিস্ট্রি অব হ্যাপিন্যাস”। ২০০৮ সালে গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিন্যাস কমিটি গঠিত হয়, যারা মানুষের অভ্যন্তরীন সুখের ওপর খেয়াল রাখে। লক্ষ রাখে কেউ যেন মানসিক অবসাদ, ডিপ্রেশন-হতাশায় আক্রান্ত না হয়। এগুলো যত বাড়বে অশান্তি, নৈরাজ্য তত বাড়বে। বাড়বে খুন, ধর্ষণ, খুনোখুনি, কোপাকুপিসহ সন্দেহ বলে গনপিটুনি। “জিডিপি”বা গ্রোস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের চেয়ে ওদের গুরুতৃ “জিএনএইচ” বা গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিন্যাসের প্রতি। ২০১৫ সালে ওরা দেশব্যাপী একটা জরিপ করে, যেখানে একটা প্রশ্ন ছিলো- ভুটানে বাস করে আপনি কতটুকু সুখী? ৯১% মানুষ নিজেকে “সুখী” বলে, ৪৩% নিজেদের “ডীপলি সুখি” বলে।
ভুটানের মূল দর্শন।
ভুটান নিজেদের জাপান, কানাডা, মালেশিয়া, সিংগাপুর বানাতে চায়না। ভুটান নিজেদের ভুটানই বানাতে চায়। তাদের চিন্তা নিজেরা করবো, নিজেদের জন্য করবো। ভুটান আগামী এতো বছরের মাঝে পৃথিবীর সব দেশকে লোন দিবে বলে-চীৎকার করেনা। নিজেরাই যেন ঋণমুক্ত থাকতে পারে, সেই টার্গেটই তৈরি করে।
গল্পটি সংগৃহীত ও কিছুটা পরিমার্জিত