সম্প্রতি বাংলাদেশে আতঙ্কের এক নতুন নাম ছেলেধরা। এর সূত্রপাত হয়েছে পদ্মা সেতুতে ১ লক্ষ মাথা লাগার গুজবের মধ্যে দিয়ে। সকল বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন সবাই সতর্ক থাকছেন এবং সতর্ক হতে পরামর্শ দিচ্ছেন এই ছেলেধরা হতে। বিগত কিছুদিনে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে ছেলেধরা মনে করে গণপিটুনিও দেয়া হয়েছে। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন প্রান হারিয়েছেন এই ধরাধাম থেকে। কয়েকজন অল্পের জন্য বেচেঁ গেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ও সরকার কঠোর অবস্থানে আসার আগ পর্যন্ত থামছিল-ই-না, এহেন সন্দেহজনক ছেলেধরা আতঙ্কে গনপিটুনীর ঘটনা।
হৃদয় বিদারক কয়েকটি ঘটনা
ঢাকার বাড্ডা এলাকায় একটি স্কুলে এক বিধবা মা তার মেয়েকে ভর্তির জন্য তথ্য নিতে গিয়ে গণপিটুনীর শিকার হন। তাসলিমা বেগম রেনু নামের ঐ স্বামী পরিত্যাক্তা প্রাণ হারিয়েছেন সেই ঘটনায়। গণপিটুনির সময়কার জনৈক ব্যক্তির মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে প্রকাশ হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আশপাশ হতে কেউ বলছেন মেরে ফেল, মেরে ফেল। পুলিশে দিলে কিচ্ছু হবে না, ছেড়ে দিবে। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে পুলিশের ওপর ও মানুষের আস্থা নেই।
বাছ-বিচারহীন গণপিটুনীর ফলে নিহতের ১১ বছরের ছেলে মাহির ও ৪ বছর বয়সী মেয়ে তুবা আজ মা হারা। কেউ কি ভেবেছেন? নিষ্পাপ এই দুটি বাচ্চা আজ কোথায় দাড়াবে? কে তাদেরকে মায়ের আচঁলে জড়িয়ে রাখবে? সহমর্মী জাতি হিসেবে পরিচিত কতিপয় অবিবেচকদের জঘন্য এবং এরুপ ঘৃন্য কর্মকান্ডের কারণে আমারা কি কেউ এর দায় এড়াতে পারি?
চট্টগ্রামের এক ভদ্রলোক তার নিজের এবং ভাই-বোনের মোট ৫ জন বাচ্চা নিয়ে এয়ারপোর্টে প্লেনে উঠিয়ে দিয়ে ফেরার পথে সিএনজি অটোরিক্সা করে আসছিল। পথে তাকে ছেলেধরা সন্দেহে সিএনজি অটোরিক্সা থামিয়ে প্রায় মেরেই ফেলছিল অবিবেচক কিছু জনতা। অথচ তার সাথের বাচ্চাগুলো বাবা-চাচা-মামা বলে চিৎকার করে যাচ্ছিল। কিন্তু কেউ তা থোড়াই কেয়ার করছিল। পরে একজন বিষয়টি খেয়াল করলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে ফোন করেন। এতে সে যাত্রায় উক্ত ব্যক্তি রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু আর কয়েক মিনিট পার হলেও আর রক্ষে ছিল না।
এভাবে ইতোমধ্যে বহু ঘটনা ঘটে গেছে অনেক নিরপরাধ অবিবেচকের সন্দেহের শিকার হয়ে প্রান হারিয়েছেন। আর অনেক জায়গায় কিছু ভালো মানুষের কল্যাণে মৃত্যুর পথ থেকে বেচেঁ গেছেন। আবার এ জাতীয় কিছু দুস্কৃতিকারী প্রকৃতই ছেলেধরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়তো ফায়দা লুটে থাকতে পারেন।
জাতির বিবেক কি একটুও নাড়া দিচ্ছেনা এসব ঘটনায়
আমরা জাতি হিসেবে এমনই অবিবেচক যে, কোন কারণ ছাড়াই এবং যাচাই-বাছাই ছাড়াই শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কাউকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলছি। আমরাতো প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে পারতাম। কিংবা তাকে আটক করে তার সর্ম্পকে খোজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। মানুষকে মেরে ফেলার মত এত বড় একটা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আমরা কেন আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারছি না!
আজ নিজের সন্তানদের নিয়ে বাইরে বেরুতে ভয় লাগে; যদি আমি বলি হই এরুপ বর্বরতার তাহলে কি হবে আমার সন্তানদের? তারা কোতায় যাবে? কাকে বাবা বলে ডাকবে? কে তাদের দিবে বাবার স্নেহ-মমতা? কে তাদের আবদার পূরণ করবে???????
আজ চারদিকে মানুষ যেভাবে মানুষকে হত্যা করছে তাতে মনে প্রশ্ন জাগছে। আমরা কি দিন দিন বর্বর ও আদিম হয়ে যাচ্ছি? আমরা কি হারিয়ে ফেলছি পারষ্পরিক সহমর্মিতা যে কারো বাচাঁর আকুতিও আমাদের হৃদয় ষ্পর্শ করছে না।
অনেক ভাল লাগলো পোস্টটি পড়ে। রেনু আপুর কথা মনে পড়লে আজও মনটা ডুকরে ডুকরে কেদেঁ ওঠে।
অনলাইন ফার্মেসী, অর্ডার দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হোম ডেলিভারী
chqg0e