ভোটার তালিকা হালনাগাদকালে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহজে এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি

বাংলাদেশে পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম এখনও আলাদাভাবে চালু হয়নি। এখনও ভোটার নিবন্ধনের মাধ্যমে পাওয়া যায় জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID কার্ড। এনআইডি কার্ড বর্তমান সময়ে সরকারী/বেসরকারী সকল সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অপরিহার্য দলিল রুপে ব্যবহৃত হচ্ছে। এনআইডি কার্ড ছাড়া সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন সেবা গ্রহণই এখন প্রায় অসম্ভব। এজন্য যারা এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি তারা চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহজেই পেতে পারেন জাতীয় পরিচয়পত্রের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আর হালনাগাদ কার্যক্রমে যেহেতু বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেজন্য কাগজপত্রের ঝামেলাও পোহাতে হয় কম। অন্যথায় অফিসে গিয়ে পরিচয় নিবন্ধন বা এনআইডি নিবন্ধন করতে প্রয়োজন হবে অনেক ধরনের কাগজ বা প্রমানপত্রের।

২০ মে ২০২২ তারিখ হতে চলছে বাড়ী গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এর তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম। ১ম ধাপে ২০ মে ২০২২ তারিখ হতে ০৯ জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ৩ সপ্তাহব্যাপী তথ্যসংগ্রহ কার্যক্রম শেষে ইউনিয়ন/পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এর ওয়ার্ড পর্যায়ে নিবন্ধন কেন্দ্রে ডাটা এন্ট্রি ও বায়োমেট্রিকসহ নিবন্ধন শুরু হবে ১০ জুন ২০২২ তারিখ হতে। প্রথম ধাপে চলবে ১৪০ টি উপজেলা/থানা এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ এর কাজ। নতুন নির্বাচন কমিশনের সময়ে এটা ১ম ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং এটি একটি বড় কর্মযজ্ঞ। এ উপলক্ষ্যে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ কাজের জন্য নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারী এ সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণও সম্পন্ন করেছে।

২০০৭ সালের ১লা জানুয়ারি বা তার পুর্বে জন্মগ্রহনকারী সকল নাগরিক অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যারা ১৮ বছর পূর্ণ করবে  এ প্রোগ্রামের আওতায় নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পাবে। ৩ বছরের অগ্রীম ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য এবার সংগ্রহ করা হলেও উপযুক্ত সময়ে তাদের খসড়া তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে চুড়ান্ত ভোটার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে বায়োমেট্রিক যাচাই সম্পন্ন হলে ভোটার তালিকাভুক্ত না হলেও তারা জাতীয় পরিচয়পত্র (NID Card) পাবে। প্রায় ৮৫ লক্ষ নতুন নাগরিক নিবন্ধন করার টার্গেট নিয়ে শুরু হচ্ছে এ কার্যক্রম। তবে একই উপজেলার ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের ১/২ টি করে ওয়ার্ডে নিবন্ধন হবে একসাথে। এভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে এক একটি ইউনিয়ন/ওয়ার্ডের পর অন্য একটি করে ইউনিয়ন/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডের ভোটার নিবন্ধন ক্রমান্বয়ে। এজন্য শহর এলাকার ক্ষেত্রে বাসার দারোয়ান বা কেয়ারটেকারকে বলে রাখতে পারেন।

নতুন এনআইডি কার্ডের জন্য নিবন্ধন করতে আপনার প্রয়োজন হবে আগেই কয়েকটি কাগজ সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। প্রথমেই প্রয়োজন হবে অনলাইনে যাচাইযোগ্য জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি, পাশাপাশি এসএসসি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে তার একটি ফটোকপিও এছাড়া সংগ্রহে রাখুন বাবা-মা-স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি কপি, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ ও প্রত্যয়নপত্রের কপি এছাড়া বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স/চৌকিদারী ট্যাক্স পরিশোধের কপি বা ক্ষেত্র বিশেষে বাড়ীভাড়ার রশিদ (ভাড়া বাড়ীতে থাকলে)। 

কবে কার নিবন্ধন হবে তা জানিয়ে দিবে সংশ্লিষ্ট তথ্যসংগ্রহকারীরাই। প্রথম পর্যায়ের ১৪০ টি উপজেলা/থানার পর প্রতিটি জেলা হতে পরিকল্পনা জানানো হবে পরবর্তী উপজেলা সমুহের তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন কার্যক্রমের।

নিবন্ধন করার পর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বায়োমেট্রিক যাচাই শেষ হলেই এনআইডি হতে নিবন্ধিতকে স্বাগত জানিয়ে তার এনআইডি নম্বরসহ একটি ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করা হবে আবেদনকারীর প্রদত্ত মুঠোফোন নম্বরে। আর এনআইডি নম্বরসহ এই বার্তা পাওয়ার পরই এনআইডি পোর্টালে ঢুকে ডাউনলোড করা যাবে জাতীয় পরিচয়পত্র। যেহেতু অনলাইন সিস্টেম হতে এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করার সুযোগ প্রদান করা হয় সেজন্য আপনাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না কখন অফিস হতে এনআইডি প্রদান করা হবে। এছাড়া অনলাইন সিস্টেমে কার্ড ডাউনলোড করার সুযোগ প্রদানের কারণে এখন আর আলাদাভাবে আগের মত এনআইডি কার্ড বিতরণের কোন প্রোগ্রাম করা হয় না। তবে কোন ব্যক্তি যদি সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কার্ডটি প্রিন্ট করে দেয়ার অনুরোধ করলে তাও পাওয়া সম্ভব।  

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটার নিবন্ধন ছাড়াও করা হবে মৃত ভোটারের নাম কর্তন এবং ভোটার এলাকা পরিবর্তন বা ভোটার স্থানান্তর এর কাজ। তবে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন জমা দিতে হবে স্থানান্তরিত উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে।

নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড সংশোধন এবং হারানো/বিনষ্ট কার্ড প্রতিস্থাপন বা রি-ইস্যু কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এ কার্যক্রম চলাকালেও।