এনআইডি সংশোধনে দেরী হয় কেন!

ভূমিকা:

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় নাগরিক সেবা হলো এনআইডি সংক্রান্ত সেবা। অনেকদিন ধরেই এই সেবাটি অনলাইনে উপলভ্য। আবেদন জমা থেকে এনআইডি (কাগুজে) কার্ড পাওয়া পর্যন্ত সবপুরো বিষয়টি সম্পাদন করার ব্যবস্থা রয়েছে এনআইডি অনলাইন পোর্টাল এর মাধ্যমে। এমনকি প্রয়োজনীয় ফি-ও দেয়া যায় কয়েকটি জনপ্রিয় মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করে। কিন্তু অনেক সময় শোনা যায় এই সেবা পেতে দেরী হওয়ার বিষয়টি। কখনও কখনও অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের লোগো - Bangladesh Election Commission Logo Png,  Transparent Png - 1024x1024(#436849) - PngFind

আবেদন করার সিস্টেম:

অনলাইন সিস্টেমে এনআইডি সংশোধনের আবেদন করতে https://services.nidw.gov.bd/ সাইটের রেজিস্ট্রার অপশনে গিয়ে রেজিস্ট্রার করতে হবে। রেজিস্ট্রার করতে প্রথমে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ এবং ছবিতে প্রদর্শিত কোডটি নির্দেশিত বক্সে লিখে “সাবমিট” বাটন ক্লিক করতে হবে। অতপর আরেকটি পেজ আসবে যেখানে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার বিভাগ, জেলা এবং উপজেলার নাম সঠিকভাবে (যেটি ডাটা বেইজে বিদ্যমান) সিলেক্ট করে দিয়ে “পরবর্তী” বাটন চাপ দিলে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP বা কোড পাঠাতে “বার্তা পাঠান” অপশন দিবে আর যদি মোবাইল নম্বরটি পরিবর্তন করতে চান তবে সেটির জন্য “মোবাইল পরিবর্তন” বাটনে চাপ দিলে নতুন মোবাইল নম্বর প্রদানের অপশন দিবে। “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করলে মোবাইলে একটি কোড যাবে যা প্রদান করে বহাল নামের বাটনে চাপ দিতে হবে। এই ধাপটি শেষ হলে একটি কিউআর কোড আসবে এবং তা স্ক্যান করার জন্য “এনআইডি ওয়ালেট” নামে একটি এ্যাপস মোবাইলে ডাউনলোড করে নিয়ে তা দ্বারা কিউআর কোডটি স্ক্যান করতে হবে। এরপর এনআইডি ওয়ালেট এ্যাপস হতে আবেদনকারী ব্যক্তির মুখের দিকে ধরে বাম-ডান দিকে ঘোরাতে হবে। সফলভাবে মুখচ্ছবি স্ক্যান হলে একাউন্ট রেজিস্ট্রার সম্পন্ন হবে এবং এনআইডি পোর্টাল একাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড সেট করার অপশন আসবে। পাসওয়ার্ড সেট করলে পরবর্তী  লগইন এ এত ধাপ পেরোতে হবে না শুধু  ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড এবং ফেস রিকগনিশন করলেই হবে অন্যথায় পুরো প্রক্রিয়াটি প্রতিবার নতুনভাবে করতে হবে। পাসওয়ার্ড সেট করলে বা না করে তা এড়িয়ে গেলে “এড়িয়ে যান” বাটনটি ক্লিক করলে প্রোফাইল চলে আসবে। প্রথমে লগইন আবস্থায় “হোম”  মেন্যু থাকবে যেখানে “প্রোফাইল”, “রি-ইস্যু”, “পাসওয়ার্ড পরিবর্তন”, “স্মার্ট এনআইডি কার্ড স্ট্যাটাস” ও “ডাউনলোড” অপশন থাকবে। এছাড়া নিবন্ধনকারীর ছবিসহ তার নাম, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা, ভোটার এলাকার তথ্য এর নিচে “বিস্তারিত প্রোফাইল” নামে আরেকটি বাটন থাকবে যেখানে ক্লিক করে বিস্তারিত প্রোফাইল দেখা যাবে।

সংশোধন বা তথ্য আপডেট করা:

“প্রোফাইল” (প্রোফাইল দেখুন/পরিবর্তন করুন) অপশন হতে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখা বা এডিট করে চাহিত সংশোধনীর সাথে রিলেটেড ডকুমেন্টস স্ক্যান/ছবি তুলে সংযুক্ত করে সংশোধনের আবেদন করা যাবে। সংশোধনের আবেদন সাবমিট বা জমা করার জন্য আবেদনের প্রয়োজনীয় ফি এর পরিমান দেভাবে বা https://services.nidw.gov.bd/fees লিংক হতে ফি এর পরিমাণ জেনে আবেদন সাবমিট করার প্রাক্কালে নির্ধারিত ফি অনলাইন/মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ করার পূর্বে আবেদন সাবমিট করলে আবেদনটি ড্রাফট অবস্থায় থেকে যাবে। এজন্য সাবমিটের পূর্বে অবশ্যই ফি জমা দিয়ে অতপর আবেদন সাবমিট করতে হবে। আবেদন সাবমিট করার পর এর একটি জেনারেটেড ফরমের কপিও ডাউনলোড করে নেয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।

যদি অনলাইন পোর্টালে আবেদন করতে অসমর্থ হন:

প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব বা অন্য কোন সমস্যার কারণে অনলাইনে আবেদন করতে অসমর্থ হলে নিজ নিজ ভোটার এলাকা অর্থাৎ যেখানে ভোটার সেখানকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে প্রযোজ্য সরকারী ফি জমা দিয়ে সংশোধনের প্রমানপত্র হিসেবে উপযুক্ত ডকুমেন্টসহ (যেমন: এসএসসি/সমমানের সনদ বা অন্য ডকুমেন্ট যা সংশোধনের সাথে প্রযোজ্য) জমা দিতে হয়।

আবেদন মঞ্জুরের জন্য প্রয়োজন উপযুকাত ডকুমেন্ট প্রদান:

  • আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি এসএসসি/সমমান বা তার উপর হয় এবং সংশোধনের বিষয় যদি হয় সেই সম্পর্কিত তাহলে অবশ্যই এসএসসি সনদ প্রদান করতে হবে;
  • তবে জন্ম তারিখ সংশোধন না থাকলে নাম বা পিতার নাম সংশোধন প্রয়োজন হলে SSC/HSC/Graduation/Masters যে কোনটিই প্রদান করতে পারেন;
  • পিতা/মাতার নামের সংশোধন প্রয়োজন হলে এসএসসি সনদের পাশাপাশি পিতা-মাতা’র এনআইডি কপিও সংযুক্ত করে দিলে ভালো হয়;
  • পিতা/মাতার নাম আমুল পরিবর্তনের মত কোন বিষয় থাকলে এসএসসি সনদের পাশাপাশি পিতা-মাতা, ভাই-বোনের এনআইডি কপি এবং ক্ষেত্রমতে ওয়ারেশ সনদ/পারিবারিক উত্তরাধিকার সনদও সংযুক্ত করে দেয়ার প্রয়োজন হবে;
  • সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী যদি এসএসসি পাশ না হয় তাহলে অনলাইলে/ওয়েবে যাচাইযোগ্য জন্ম সনদ প্রদান করতে হবে;
  • তবে পাসপোর্ট বা অন্য কোন উপযুক্ত ডকুমেন্টসহ আবেদন জমা দেয়া যায় যা সংযোগী ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়;
  • সর্বপরি যে যে তথ্য সংশোধন চাওয়া হচ্ছে তার সাথে সম্পর্কিত এক বা একাধিক ডকুমেন্ট থাকলে হাতে না রেখে সংযুক্ত করে দিন সব ডকুমেন্ট;
  • ডকুমেন্ট সমূহ সংযুক্ত করার সময় ফাইল এর নাম ডকুমেন্ট এর নাম অনুযায়ী করাই শ্রেয়;
  • একাধিক ডকুমেন্ট এক ফাইলে দিলে ফাইলের নামে + বা কমা ব্যবহার করে (উদাহরণ: SSC, Birth, FM NID, Spouse NID, Childs NID, Marriage cert) সবগুলো ডকুমেন্টের নাম সংক্ষিপ্তভাবে দিয়ে দিতে পারেন;
  • তবে এক ফাইলে একাধিক পেজ থাকলে তার ওয়েট যাতে কম হয়, ডকুমেন্টটি সাদা-কালো হলেই হবে এবং প্রয়োজনে ডকুমেন্ট রিসাইজার ব্যবহার করে ফাইলের আকার ছোট করে নিলে ভালো হবে;
  • তবে নাম পরিবর্তন করার বিষয়ে আবেদন হলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার কর্তৃক সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন হবে;

সব কিছুর পরেও কেন বাতিল হয় সংশোধনের আবেদন:

তবে যে কারণে সংশোধন চাওয়া হচ্ছে তার উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে অবশ্যই। সংশোধনের যৌক্তিকতা প্রমান না করতে পারলে সারবত্তাহীন আবেদন গ্রহনযোগ্য মর্মে বিবেচিত হয় না এনআইডি কর্তৃপক্ষের নিকট। এজন্য এমন সব আবেদন বাতিল বা নামঞ্জুর করে থাকে নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তা। যেমন, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিবেদনকারী যদি উপযুক্ততা খুজে না পান এবং তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তাহলে সেই আবেদন অনুমোদন করা হয় না। এছাড়া বয়সের পরিবর্তন চাইলে তার যৌক্তকতা প্রমানিত না হলে তাও অনুমোদন হয় না। অনেক সময় দেখা যায় নিবন্ধনের সময় সর্বনিম্ন বয়সসীমা যা ছিল আর এখন যা চাওয়া হচ্ছে সেটি হলে নিবন্ধনের সময়ের সর্বনিম্ন বয়সের নিচে বা আন্ডার এজড হয়ে যায়্ কখনও কখনও বাবা-মা-ভাইবোনের সাথে বয়সের ব্যবধান আযৌক্তিক হয়ে যায় এমনকি এনআইডি থাকা সত্তেও তা লুকিয়ে বয়স বাড়িয়ে/কমিয়ে ভিন্ন ডকুমেন্ট দেখিয়ে চাকরী/পাসপোর্ট নিয়ে এখন সেই অনুযায়ী এনআইডি সংশোধন চাওয়া হলে আনেক সময় কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনা করেন না এজন্য আবেদন নিষ্পত্তি হতে দেরী হয় এমনকি অনেক সময় অনুমোদন হয় না।